প্যানিক ডিসঅর্ডার
জিয়ানুর কবির
প্যানিক ডিসঅর্ডার একটি উদ্বেগ জনিত তীব্র মানসিক সমস্যা। অনেকেরই হঠাৎ করে বুক ধড়ফড় করে, হাত-পা অবশ লাগে, নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, ব্যক্তির মনে হয় তিনি এখনই মারা যাবেন। এই রোগটিকে প্যানিক ডিসঅর্ডার বলে। এসব রোগীরা ভয়ে দ্রুত হাসপাতালে যান। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডাক্তার যখন বলেন আপনার কোন শারীরিক রোগ নেই তখন রোগীদের মন আরো খারাপ হয়ে যায়। রোগীরমনে হতে থাকে ডাক্তার তার রোগ ঠিকমতো ধরতে পারেননি। আক্রান্ত রোগীরা বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে যেতে যেতে চিকিৎসার ফাইল ভারি করে ফেলেন। কোন ডাক্তার রোগটিকে মানসিক সমস্যা বললে রোগীরা আরোও বেশী চিন্তিত হয়ে যান। তিনি মনে করেন কেউ সঠিক রোগ ধরতে পারছেনা। কেউ কেউ বিদেশে গিয়ে চিকিৎসক দেখান, সেখানেও রোগ ধরা পরে না। রোগী পুনরায় বিষন্ন হয়ে পড়েন। পরিবার ও আত্নীয়-স্বজন এসব রোগীদেরজটিল হার্টের রোগী মনে করেন। তাদের সকল কাজকর্ম বিরত রেখে বাসায় থাকতে বলেন। এতে রোগীসারাক্ষণ রোগ নিয়ে ভাবতে ভাবতে দিন কাটায়।ফলে সমস্যাটি আরও জটিল হয়। এসকল রোগী এবং তাদের পরিবার বারবার চিকিৎসা্র খরচ দিতে গিয়ে আর্থিক দৈন্যদশায় ভোগেন। সচেতনতার অভাবে তারা মানসিক চিকিৎসা নিতে চায় না ।
কতগুলি বিষয় প্যানিক ডিসঅর্ডার কে নিয়ন্ত্রণ করে, এগুলো হলো:
ভ্রান্ত ধারণা:
আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের লক্ষণ গুলোকে এই ভুল ধারণাগুলোর কারণে ভুল ভাবে বুঝে থাকেন। যেমনঃ এসব রোগীরা বুক ধড়ফড় করলে মনে করেন হার্টের অসুখ হয়েছে, মাথা ঘুরলেই বা একটু মাথাব্যথা করলে মনে করেন স্ট্রোক করে ফেলবেন, হাত-পা ঝিম-ঝিম করলে বা একটু অবশ মনে হলে ভাবেন প্যারালাইসিস হয়ে যাবে, একটু শ্বাস-প্রস্বাশ জনিত সমস্যা হলেই ভাবেন তিনি মারা যাবেন ইত্যাদি।
নেতিবাচক চিন্তাঃ
আক্রান্ত ব্যক্তির মনের ভিতর কতগুলি নেতিবাচক চিন্তা থাকে, যেগুলি আপনা আপনি রোগীর মনে চলে আসে। যেমনঃ রোগী নিজেকে অসহায়,অযোগ্য ভাবেন, পাপী ভাবেন ইত্যাদি।
সেফটি বিহেভিয়ারঃ
রোগীদের প্যানিক এটাক থেকে মুক্ত থাকার জন্য কতগুলি আচরণ করতে দেখা যায়যেমন: সব সময় সাথে লোক রাখা, নিজেকে পর্যবেক্ষণ করা।এসব আচরণ সমূহ সাময়িক স্বস্তি দেয় । কিন্তু পরবর্তীতে রোগটিকে মনের মধ্যে স্থায়ী করে। এসব আচরণ যত বেশী করা হয়, প্যানিক ডিসঅর্ডার তত বাড়ে।
প্যানিক ডিসঅর্ডার থেকে মুক্তি পেতে কি করতে পারেনঃ
প্যানিক ডিসঅর্ডার নিয়ে ব্যক্তি সব চেয়ে বেশী ভয় পান এটা ভেবে যে তারা মারা যাবেন। গবেষনায় দেখা যায়, এপর্যন্ত বিশ্বে কোন রোগী এই রোগে মারা যায়নি। সে কারণে আপনি ভরসা রাখতে পারেন আপনি এই রোগে মরবেন না।
প্যানিক ডিসঅর্ডার পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিশ্চিত হতে হবে আপনি অন্য কোন রোগে ভুগছেন কিনা। একবার যদি আপনার ডাক্তার বলেন আপনার শারীরিক কোন রোগ নেই তারপর অন্য ডাক্তার না দেখিয়ে আপনি সরাসরি কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এর সহায়তা নিবেন।
প্যানিক ডিসঅর্ডারের জন্য মুলত দায়ী কিছু ভুল ধারণা, নেতিবাচক চিন্তা ও সেফটি বিহেভিয়ার। এসব নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি প্যানিক ডিসঅর্ডার থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। নিজে নিজে সমাধান করতে না পারলে সাইকোথেরাপি নিতে পারেন। সাইকথেরাপি ভুল ধারণা, নেতিবাচক চিন্তা ও সেফটি বিহেভিয়ার নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
প্যানিক ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা রোগের ভয়ে কাজকর্ম বাদ দেন। এটি তাদের রোগ বাড়িয়ে তোলে। এ কারণে নিষ্ক্রিয় না থেকে কাজকর্মে যাওয়া প্রয়োজন।
যে জায়গাগুলোতে ভয় পান সেগুলোউপেক্ষা না করে মোকাবেলা করা প্রয়োজন। প্রথমদিকে ভয় লাগলেও পরবর্তীতে ভয় কেটে যাবে। এই রোগ আপনার জীবনের মান কমিয়ে দেবে ।তাই অতিসত্বর মনোরোগ বিশেষজ্ঞের বা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিষ্টের সহায়তা নিন।
লেখক পরিচিতিঃ
জিয়ানুর কবির
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট
email: jia.cpsy@gmail.com