বিষণ্ণতা একটি সাধারণত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানসিক অসুস্থতা।দৈনন্দিন কার্যকলাপ যেমন- ঘুম, খাওয়া ও অন্যান্য কাজে প্রভাব ফেলে।বিষন্নতা সনাক্তকরণের জন্য কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় ধরে এর অন্যতম উপসর্গ গুলো উপস্থিত থাকা আবশ্যক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্য অনুযায়ী , অক্ষমতার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত এই বিষণ্ণতা।প্রায় ২৬ কোটির ও বেশি মানুষ এই মুহুর্তে গুরুতর বিষণ্ণতার শিকার।২০১৮সালের জরিপ ও গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৬.৭% মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগছেন। প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী মানসিক হাসপাতাল গুলোতে বহির্বিভাগে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন এবং তাদের একাংশ ভর্তি ও হচ্ছেন।
•মন খারাপ থাকা
•নেতিবাচক চিন্তা আসা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা থাকা
•আনন্দ দায়ক কোন কিছু উপভোগ করতে না পারা
•কর্মস্পৃহা কমে যাওয়া
• ধীরতা ও স্থবিরতা আসা
•অমনোযোগিতা এবং ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করতে না পারা
•নিজেকে অযোগ্য ভাবা
•আত্মবিশ্বাস এবং আত্ম সম্মান কমে যাওয়া
•বিভিন্ন কারণে নিজেকে দায়ী ভাবা এবং অনুশোচনা করা
•নিজের ক্ষতি করতে চাওয়া
•অস্থিরতা
•মৃত্যু চিন্তা আসা
•বেঁচে থাকা অর্থহীন মনে হওয়া ,আত্মহত্যার চিন্তা আসা
সাধারণত কোন একটি মাত্র কারণে বিষন্নতা হয় এমন বলা যাবে না বরং অনেক গুলো কারণ এর সমন্বয়েবিষণ্নতা রোগটিতৈ হতে পারে।বিভিন্ন গবেষনায় এর কারন সম্পর্কে অনেক বিষয় উঠে এসেছে।
জিন গত কারন ডিপ্রেশনের কারনহিসেবের জিনগত ত্রুটির প্রমান পাওয়া গেছে।পিতামাতা বা নিকটাত্মীয় কারো ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা থাকলে কোন ব্যক্তির ডিপ্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে।
মস্তিষ্কের জৈব-রাসায়নিকপদার্থের ভারসাম্যহীনতা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা গেছে মস্তিষ্কের বিভিন্ন জৈব-রাসায়নিক পদার্থ যেমন- সেরোটোনিন , নরএপিনেফ্রিন, ডোপামিন, গামা অ্যামিনোবিউটাইরিক এসিড, গ্লুটামেট ইত্যাদির স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারনে ডিপ্রেশন হয়ে থাকে। এন্ডোক্রাইন ভারসাম্যহীনতা :
বিভিন্ন এন্ডোক্রাইন রোগে ডিপ্রেশন হয়ে থাকে।এছাড়া হাইপথ্যালামো-পিটুইটারি- অ্যাড্রেনাল আক্সিসে পরিবর্তনের কারনে ডিপ্রেশন হতে পারে। মস্তিষ্কের গঠন গত কারন ডিপ্রেশন আক্রান্ত রোগীদের মস্তিষ্কের বিভিন্নস্থান যেমন- ভেন্ট্রিকল, হিপপোক্যাম্পাস, ব্যাজালগাংলিয়া, কর্টেক্স ইতাদিতে বিভিন্ন ধরনের গঠন গত পরিবর্তন পাওয়া গেছে।
কগনিটিভ মতবাদ : এই মতবাদ অনুযায়ী একজন বিষন্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে, তার চারপাশকে এবং ভবিষ্যতকে নেতিবাচকভাবে দেখে কোন কিছুই তিনি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে পারেন না|
বিষন্নতা চিকিৎসার জন্য ঔষধ এবং সাইকোথেরাপি দুটোই সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।সাইকোথেরাপির মাধ্যমে রোগীকে তার নেতিবাচক চিন্তা এবং দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন করে ইতিবাচক মনোভাবে চেষ্টা করা হয়।
বিষন্নতায় যে ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেগুলোকে আমরা এন্টিডিপ্রেসেন্ট বলে থাকি।বিভিন্ন ধরনের এন্টিডিপ্রেসেন্ট বাজারে রয়েছে যেমন ট্রাইসাইকেলিক এন্টিডিপ্রেসেন্টস, সিলেক্টিভ সেরেটোনিন রিয়া পটেক ইনহিবিটর
পরিশেষে বলা যায়, বিষন্নতা সম্পূর্ণ নিরাময় যোগ্য একটি রোগ। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে এই রোগ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে অত্যন্ত স্বল্প খরচে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিষন্নতা রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
ডাঃ সুলতান-ই-মনজুর
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট