বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০২৩
ড. মোঃজহিরউদ্দিন
দুইএপ্রিল‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। প্রতি বছরই দিবসটিতে কোন একটি বিষয় বস্তুকে গুরুত্ব দেয়া হয়। ২০২৩ সালেরবিষয়হলো- “রূপান্তরের অভিযাত্রায় সবার জন্য নিউরোবান্ধব অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব গঠন” ।
২০২৩ সালের এপ্রিলে বিশ্বর আনুমানিক জনসংখ্যা আটবিলিয়নের উপরে (আটশত দুই কোটিএকান্নলক্ষের বেশী)। কিবিশাল এই পৃথিবী আর কিব্যাপক এর জনসংখ্যা! লক্ষ্য করুন, কত বৈচিত্র্য আছেআমাদেরমাঝে। দুই জন মানুষেরহাতেরছাপএকরকমনয়। পার্থক্য দেখাযায়বর্ণে, উচ্চতায়, ওজনে, দেহেরগঠনে, চুলেররঙ ও গঠনে, রুচিতে, মেজাজে, ভাষায়, খাদ্যাভ্যাসে, ব্যক্তিত্বে, আচরণে এমনকি জি¦নেটিক গঠনেও। পার্থক্য আছে জ্ঞানে, শিক্ষায়, পেশায়। পার্থক্য আছে গানে, নাচে, শিল্পে, কৃষ্টিতে। কারো সাথে কারোমিল নেই। এক জাতির সবাই আবার এক রকম নয়। সৃষ্টিকর্তা আমাদের এক করে গড়েননি। আমাদেরকেতাই বৈচিত্র্য মেনে নিতে শিখতেহবে।
অটিজমকে অসুখ হিসাবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। চিকিৎসা করে তাদের সুস্থ করে তোলারও কিছু নেই। বরংঅটিজম যাদের আছে তারা আমাদের মতোই মানুষ, তবে তাদের সাথে আমাদের মস্তিưও জিন গত গঠনে কিছু পার্থক্য রয়েছে। ফলে তাদের সাথে আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়। অন্য দশজন মানুষের মতই তাদের কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে আবার কিছু দূর্বলতার দিকও রয়েছে। আমরা যদি তাদেরকে কাছে টেনে নেই, মেনে নেই, যতœকরি, তাদের জন্য ইতিবাচক পরিবেশ তৈরী করি, তবে তারা তাদের পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে বিকশিত হতেপারবে।
অটিজম একটি বিকাশ জনিত অসুবিধা। এখানে শিশু বয়স থেকেই তাদের বিকাশটি ঠিক মতো হয় না। যাদের অটিজম থাকে তাদের অন্য মানুষের সাথে ভাব বিনিময়ের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষত্ব থাকে। তারা তাদের মতো করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে যা অনেক সময় আমরা বুঝিনা। তাদের অনেকের ভাষা থাকেনা। যাদের ভাষা থাকে তাদের ভাষাও হয় খুব সরল ধরণের। অল্প ও সহজ শব্দ ব্যবহার করে তারা কথা বলে। অনেকের অবাচনিক যোগাযোগেরও সমস্যা থাকে। অনেকেই মানুষের সাথে চোখে চোখে তাকায়না।
যাদের অটিজম আছে তারা অনেক সময় সীমিত কিছু বিষয়ে খুব আগ্রহী থাকে। যেমন, কেউ হয়তো একটা খেলনা বা একটি বস্তু বা কোননির্দিষ্ট পোষাক নিয়ে মাতলো। এটি থেকে অন্য দিকে মনোযোগ দিতে চায়না কিছুতেই। এদের অনেকের নির্দিষ্ট রুটিনআছে। এই রুটিন কিছুতেই পরিবর্তন করতে রাজিনা। অনেকেই একটি নির্দিষ্ট ধরণ অনুসরণ করে পুনরাবৃত্তিমূলক দেহভঙ্গি করতে থাকে। অনেকেই অর্থহীন অস্বস্তিকর জোড়ালো শব্দ করতে থাকে।
অনেকেরই অন্যেরচিন্তা ও আবেগ বুঝতে অসুবিধা হয়। মা অসুস্থ থাকলে বা কান্না করলে ও অনেক শিশু বুঝেনা। অনেকেরই নিজের আবেগ প্রকাশের ধরণ এমন যে, অন্যরা তা ঠিক মতো বুঝতে পারেনা। এরা আনন্দ পেলে বা দুঃখ পেলে অন্য শিশু দের মতো মায়ের বা বাবার সাথে বলতে আসেনা। এরা কিছু শিখলে নিজের মতো করে শিখে। এরা কোন কিছুতে মনোযোগ দিলে নিজের মতো করে দেয়। অন্যদের কাছে মনে হয় যে, এই শিশুরা যেন নিজের জগতে ডুব দিয়ে আছে। আশে পাশের জগতের দিকে মন নেই।
এই শিশুদের সংবেদনশীলতা ও বিশেষ ধরণের। তারা কিছু বিশেষ সংবেদনের প্রতি আগ্রহী থাকে। অনেকেই নির্দিষ্ট ধরণের গান-বাজনার প্রতি আগ্রহী থাকে। অনেকে ত্বকে স্পর্শ বিশেষভাবেপছন্দ করে।
বিশ^ ব্যাপী প্রচুর অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅরডার সম্পন্ন মানুষ দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার জন শিশুর মধ্যে দ্ইু জন শিশুর অটিজম দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে এদেরসংখ্যা বেশী ।
সাধারণ মানুষের একটি স্বভাব হলো নতুনত্ব বা বৈচিত্র্যকে অনেক সময় নিতে পারেনা। কাউকে নিজের থেকে আলাদা দেখলে তার প্রতি সন্দিহান থাকে, অনেক সময় নির্দয় আচরণও করে। মনেকরে এই ব্যক্তিটি ভালনয়। তার সাথে অন্যায় আচরণ করা যেন ঠিক আছে এমন একটি মনোভাব অনেকেই পোষনকরে। বিভিন্ন ধরণের পঙ্গুত্ব সম্পর্কে এমন মনোভাব দেখাযায়। মানুষ এধরণের শিশুর সাথে তার শিশুকে খেলতে দিতে চায়না। এমন কি এমন শিশু তার সন্তানের সহপাঠী হোক তাও তারা চায়না। অনেক সময় তাদেরকে বিভিন্ন অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। সামাজিক অনুষ্ঠান, দাওয়াত ইত্যাদিতে তাদেরকে স্বাগত জানানো হয়না। তাদের সহজে বিয়ে হয় না। অনেক সময় তাদের কে সম্পত্তির অধিকার থেকেও বঞ্চিতকরা হয়। অটিজম রয়েছে এমন মানুষ গুলো এই সব বিপদের মধ্যেই পড়তে পারে। জাতিসংঘ এই ধরণের বঞ্চনা ও অধিকার হননের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। জাতিসংঘ চায় অটিজমসহ সব ধরণের পঙ্গুত্ব সম্পন্ন মানুষই যাতে মানবাধিকার পায়, যতœপায়, নিজেদেরকে পরিপূর্ণ ভাবে বিকশিত করতেপারে।
এই প্রেক্ষাপটে ২০০৮ সাল থেকে জাতিসংঘ বিশ^ অটিজম সচেতনতা দিবস পালন করে আসছে। এই দিবস পালনের উদ্দ্যেশ্য হলো মানুষ যাতে অটিজম আছে এমন মানুষদের স্বীকার করে নেয়, নিজের করে নেয়, তাদের কে সমাজের মধ্যে ভালভাবে অন্তর্ভূক্ত করে। এমন পরিবেশ তৈরী করে যাতে এই মানুষ গুলো আমাদের থেকে ভিন্ন ধরণের মস্তিưও জি¦নেটিক গঠন থাকা সত্বেও, ভিন্নধরণের বৈশিষ্ট্য থাকা সত্বেও আমাদের সাথে একাত্ম হতেপারে, সমাজে তাদের অবদান রাখতে পারে। জাতিসংঘ একেক বছর একেটি শ্লোগানকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এবছরের বিশ^ অটিজম সচেতনতা দিবসে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে- “রূপান্তরের অভিযাত্রায় সবার জন্য নিউরো বান্ধব অন্তর্ভূক্তি মূলক বিশ^ গঠন”- এই কথাটির উপর। কথার মানে হলো আমরা সবাই কে নিয়ে চলবো। অটিজম আছে এমন মানুষ গুলো কে নিজের করে নিব। তাহলে এই মানুষ গুলো বাড়িতে, কর্মস্থলে, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এবংসিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।
জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংগঠন, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, অটিজম রয়েছে এমন মানুষেরা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা, বিখ্যাত তারকা, খেলোয়াড়, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুধি সমাজ, পেশাজীবীরা সহ বহু মানুষ অটিজম সচেতনতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে আমরা পেয়েছি মনোবিজ্ঞানী সায়মাওয়াজেদকে যিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে অটিজম ও অন্যান্য প্রতিবন্ধীতা নিয়ে অক্লান্ত ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার অবদানের কারণে বাংলাদেশ অটিজম সচেতনতায় এক উচ্চ স্তরে পৌচেছে। বাংলাদেশের সংবিধানে সকল মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশেষ ভাবে বিভিন্ন পঙ্গুত্বজনিত কারণে যাতে কারো অধিকারহানী না ঘটে তার বিষয়ে বলা হয়েছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করে। এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মানবাধিকার রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই আইনের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ অটিজম ও সব ধরণের প্রতিবন্ধী বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে স্বক্ষম হয়েছে। এছড়াও ২০১৩ সালে‘ নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি প্রটেকশন ট্রাস্ট অ্যাক্ট’, ২০১৮ সালে‘বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল অ্যাক্ট’, ২০১৯ সালে‘ইন্টিগ্রেটেড স্পেশাল এডুকেশনপলিসি’এবং ২০১২ সালে‘ন্যাশনাল স্ক্রিনিংকমিটি ফর অটিজম এন্ড এনডিডিস ’প্রণয়ণকরেছে। এই আইন, পলিসি, এবংকমিটিগুলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষায় সুদূর প্রসারী ভূমিকা রাখবে। তবে এই অল্প আলোচনায় বিষয় গুলো বোঝানো কঠিন।
সমাজের সদস্য হিসাবে আপনি অটিজম আছে এমন মানুষদের কল্যাণে নিচের পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন।
-পঙ্গুত্ব আছেবা কোন ধরণের ডিজঅ্যবিলিটি আছে এমন মানুষদের দিকে অতিরিক্ত ঔৎসুক্য দেখাবেন না।
– তাদের প্রতিসহন শীলতা দেখান। তাদেরকে নিজের করে নিন। আপনার সন্তানেরও এমন অসুবিধা থাকতে পারতো। এই বিশেষ শিশুদের আচরণ অন্য দশটা মানুষের মতো নাও হতে পারে। তাদের অস্বস্তিকর আচরণকে গুরুত্ব না দিয়ে তাদের কে কাছে টেনে নিন এবংতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
-আপনার সন্তানকে প্রতিবন্ধী শিশুদের সাথে মিশতে উৎসাহিত করুন। তাদের পরিবারের সাথে আপনারা সামাজিক ভাবে মিশুন। এই শিশুদের সামাজিক অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান।
-অটিজম আছে এমন মানুষ গুলো যাতে কারো দ্বারা না ঠকে সেইব্যবস্থা করুন।
-এই শিশুরা তাদের নিজেদের মতো করে ভাববিনিময় করে। অনেক সময় তা অন্যদের পক্ষে তা বুঝতেসমস্যা হয়। তাদেরকে বোঝার চেষ্টাকরুন। বুঝে তারপর তাদের সাথে প্রতিক্রিয়া করুন।
-যদি আপনার কোন সামাজিক প্রতিষ্ঠান গঠনে নিয়ন্ত্রণ থাকে তবে তার অবকাঠামো টি এমন ভাবে করবে যাতে পঙ্গত্বের অসুবিধার করণে কোন শিশু সেই প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে অসুবিধায় না পরে। যেমন, মার্কেট, মসজিদ ইত্যাদির প্রবেশপথ এমনভাবে তৈরী করুন যাতে পঙ্গুত্ব থাকলেও অন্যরা তা ব্যবহার করতেপারে। পঙ্গুত্ব আছে এমন মানুষদের কে এই ধরণের সামাজিক প্রতিষ্ঠানে স্বাগত জানান।
অটিজম আছে এমন মানুষদের পরিবারের সদস্যরা নিচের পদক্ষেপ গুলো নেয়ার বিষয়ে বিবেচনা করতে পারেন।
-যদি এই শিশুদের অটিজম ছাড়াও অন্য কোন সমস্যা বা অসুখ থাকে তবে তার যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করুন। যদি তার কোন শারীরিক রোগ থাকে তবে যে ধরণের রোগ রয়েছে সেই ধরণের রোগের ডাক্তারের কাছে তাকে নিয়ে যান। সরকারী পর্যায়ে বিশেষায়িত ইনস্টিটিউ, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালে আপনার শিশুকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে পারন। এই প্রসঙ্গে জানা থাকা ভাল যে, ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে‘ ইনস্টিটিউট অব পেইডিয়াট্রিকনিউরোডিজঅরডার এন্ড অটিজমবাইপনা’ নামের একটি চমৎকার চিকিৎসা সেবা দান কেন্দ্র রয়েছে যেখানে আপনার সন্তানকে নিয়ে গেলে সে একই কেন্দ্রে বহুধরণের পেশাজীবীর সেবা পাবে। যদি আপনার শিশুর মধ্যে সমস্যা মূলক আচরণ, যেমন, নিজের ক্ষতিকরা, আগ্রাসী আচরণ করা বা অন্য কোন মানসিক সমস্যা থাকে তবে মানসিক রোগের ডাক্তার এবংমনোবিজ্ঞানীদের কাছে নিয়ে যেতে পারেন। ঢাকার শেরেবাংলানাগরের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে এবং সরকারী মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগে আপনি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা পাবেন। আপনার সন্তানের যদি ভাষার সমস্যা থাকে তবে স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিষ্টের কাছে নিয়ে যান। এছাড়া জেনে রাখা ভাল যে, ইদানিং কালে কিছু ইলেকট্রনিক যন্ত্র বেরহয়েছে যার মাধ্যমে যাদেরভাষা নেই তারাও নিজের মনের ভাব অন্যদের কাছে প্রকাশ করতে পারে। অনেক সময় এর জন্য এমন কি যান্ত্রিক ভাষাও ব্যবাহর করা হয়। অর্থাৎযন্ত্র ভাষাহীন ব্যক্তির পক্ষ হয়ে কথা বলে। তবে এগুলো ব্যবহার করতে গেলে আপনার সন্তান কে কিছুটা প্রশিক্ষণ নিতে হবে। আপনার সন্তানের যদি এমন ধরণের শারীরিক পঙ্গুত্ব থাকে যার জন্য ফিজিও থেরাপী লাগবে তবে তাকে ফিজিও থেরাপিষ্টের কাছে নিয়ে যান। যদি তার পঙ্গুত্ব এমন হয় যে সে নিজেরযতœঠিক মতো নিতে পারেনা তবে অকুপেশনাল থেরাপীষ্টের কাছে নিয়ে যেতে পারেন।
-আপনাকে বহু বিষয়ে জ্ঞানী ও দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। পেশাজীবীরা আপনার সন্তানকে সেবা দিবে। কিন্তু আপনাকে তার সাথে চব্বিশঘন্টাই কাটাতে হয়। তাই নিজে পেশাজীবীদের কাছে শিখে দক্ষ হয়েউঠুন। প্রশিক্ষণ নিন, বই পড়–ন, ওয়েবসাইটে পড়–ন। আপনি তাহলে সন্তানের ভাল সেবা নিশ্চিত করতে স্বক্ষম হবেন।
-সন্তানের লেখা পড়া নিশ্চিত করুন। ডিজঅ্যবিলিটি কম হলে সে সাধারণ স্কুলেই পড়তে পারবে। বেশী অসুবিধা থাকলে তাকে হয়তো স্পেশাল স্কুলে পড়তে হতে পারে।
-ধৈর্য্য ধরুন। আপনার শিশুটিকে শর্তহীন ভালোবাসাদিন। সময় মাঝে মাঝে খুব কঠিন লাগতে পারে। ধৈর্য্য হারাবেন না। আপনার শিশু বিশেষ শিশু। তার জন্য আপনার অসামান্য চেষ্টায় হয়তো সৃষ্টিকর্তা আপনার উপরে খুশী থাকবেন।
-সমাজে ভালো মানুষের সাথে সাথে দুষ্টমানুষওআছে। আপনার পরিবারের মধ্যেও এমন খারাপ লোক থাকতেপারে। অটিজম আছে এমন শিশুদের ডিজঅ্যাবিলিটির সুযোগ নিয়ে অনেক সময় এই খারাপ মানুষ গুলো বিভিন্ন ভাবে তাদের নির্যাতন করতেপারে। এই খারাপ মানুষ গুলো কিন্তু অনেক খারাপ কাজ করতে ওপিছু পা হয় না। অটিজম আছে এমন শিশুরা যেহেতু ঠিক মতো বলতে পারেনা তাই তারা বিপদের মধ্যে পড়ে। আপনার শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সজাগও সচেষ্ট থাকুন।
-আপনার শিশুকে পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্রিয় করুন। সে কি চায়, কি খেতে চায়, কোথায় যেতে চায়, কিধরণের পোষাক চায় জিজ্ঞেস করুন ও তার চাওয়া কে অগ্রাধিকার দিন। তাকে সামাজিক ও পরিবারিক অনুষ্ঠানে নিয়ে যান।
-সমাজের নীচ লোকেরা যদি আপনার সন্তান বা আপনাকে নিয়ে কটু কথা বলে তবে তা অগ্রাহ্য করুন। এরা অবোধ। উপয্ক্তু পরিবেশ পেলে এমন আচরণের প্রতিবাদ করুন।
-প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ সম্পর্কে পড়–ন ও আপনার শিশুর অধিকার লঙ্ঘিত হলে আইনের আশ্রয় নিন। বাংলাদেশ আপনার সাথেই আছে।
-নিজের প্রতি মায়া করুন। নিজেকে ভালবাসুন। কি অমানুষিক পরিশ্রমই না আপনাকে করতে হচ্ছে! অসীম দায়ীত্ব নিয়েছেন আপনি! অটিজম আছে এমন শিশুদের যতœ নেয়া খুবই কঠিন কাজ। আপনার কোন ধরণের প্রশিক্ষণ নেই। তবু আপনি করেই যাচ্ছেন। মনে রাখবেন আপনি কোন মহা মানব নন। খুবই সাধারণ একজন মা বা বাবা। আপনার ক্লান্তি লাগলে, বিরক্ত লাগলে তা ঠিক আছে। এমন হতেইপা রে। পরিবারের অন্যদের সাহায্য নিন। তারা কিছু সময়ের জন্য আপনার শিশুর যতœনিক। আপনি কিছুটা সময় নিজের মতো করে কাটান। বিশ্রাম নিন। ঘুমান। বেড়াতেযান। পছন্দের খাবার খান। রাত্রে যাতে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে অন্তত সাতঘন্টা ঘুম নিশ্চিত হয় তারব্যবস্থা করুন। আপনার যদি অতিরিক্ত মানসিক চাপ হয় তবে পেশাদার সেবা নিতে পারে। কাউন্সেলিং নিয়ে দেখুন। ভাল অনুভব করবেন।
বাংলাদেশ হচ্ছে একটি সহনশীল দেশ। আমরা একটি সহন শীল জাতি। আমরা মানুষের বৈচিত্র্য মেনে অভ্যস্ত। অটিজম আছে এমন শিশুরা আমাদের সন্তান। আসুন আমরা ও দের নিজের করে নিই, ওদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকা সত্বেও এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করি যাতে তারা তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে ও সমাজের উৎপাদন শীল অংশ হয়ে উঠতে পারে, দেশ ও জাতির জন্য কাজকরতেপারে।
লেখকপরিচিতিঃ
ড. মোঃজহিরউদ্দিন
ক্লিনিক্যালসাইকোলজিস্ট, সহকারীঅধ্যাপক, জাতীয়মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।