• "মনের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন "
  • "মানসিক স্বাস্থ্য বিনা স্বাস্থ্য নেই"
  • "সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য হোক বৈশ্বিক অগ্রাধিকার।"
  • "মনের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন "
  • "মানসিক স্বাস্থ্য বিনা স্বাস্থ্য নেই"
  • "সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য হোক বৈশ্বিক অগ্রাধিকার।"
  • "মনের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন "
  • "মানসিক স্বাস্থ্য বিনা স্বাস্থ্য নেই"
  • "সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য হোক বৈশ্বিক অগ্রাধিকার।"

শিশু যৌন নির্যাতন

নাসিম জাহান

শিশুরা পবিত্র ফুলের মত, কোমল আর সুন্দর। কিন্তু তাদের কতটা যত্নে রাখতে পারছি আমরা! দৈনিক পত্রিকা যেন আমাদের বিবেক এর উপর কষাঘাত। কিছুদিন পরপরই সামনে আসে শিশু যৌন নির্যাতন এর খবর।  মানুষ রূপি কিছু পশুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারছি কি আমরা শিশুদের?আঘাত তো শুধু শরীরে নয়, লাগে মনের অনেক গভীরেও!

 

শিশু যখন তার ইচ্ছা বা সম্মতির বিরুদ্ধে কোন প্রাপ্তবয়স্ক বা তারচে বয়সে বা শক্তিতে বড় কারো দ্বারা যৌন কার্যকলাপে নিযুক্ত হয়, তাকেই আমরা শিশু যৌন নির্যাতন বলে সংজ্ঞায়িত করতে পারি। এটি ঘটতে পারে শিশুর উপর জোর খাটিয়ে অথবা তার বিশ্বাস ও নাজুকতার সুযোগ নিয়ে।

এই রকম নির্যাতন এর প্রভাব থেকে যেতে পারে দীর্ঘ সময়…এমন কি সারাজীবন! ক্ষতি হতে পারে শারীরিক মানসিক সব দিক দিয়ে। মানসিক সমস্যার মধ্যে…আচরণগত সমস্যা, অতি উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, এমনকি Acute Stress Disorder (ASD), Post Traumatic Stress Disorder (PTSD), Adjustment Disorder , Dissociative disorder, Conversion disorderএর মত অসুখও হতে পারে। বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে তার পারিবারিক আর সামাজিক জিবনেও।


শিশুকে রক্ষা করতে হলে প্রচলিত ভুল ধারনা থেকে বেরিয়ে এসে জানতে হবে প্রকৃত সত্য। এমনি কিছু প্রচলিত ভুল ধারনা আর প্রকৃত সত্য …আসুন জেনে নেই।

 

১) শ্রুতিকথা- যৌন নির্যাতন মুলত মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে।
সত্য- গবেষণায় দেখা গেছে গড়ে মহিলাদের মধ্যে শতকরা ৩০ এবং পুরুষদের মধ্যে ১৬ জন ছেলেবেলায় কোন না কোন প্রকার যৌন নির্যাতন এর শিকার 

হয়। 

২) শ্রুতিকথা- দরিদ্র এবং অশিক্ষিতদের মধ্যেই সাধারনত শিশু যৌন নির্যাতন সীমাবদ্ধ।
মিথ্যা- শিশু নির্যাতন এর কোন পরিসীমা নেই। সব সম্প্রদায়এ, সব সামাজিক প্রেক্ষাপটে, পৃথিবীর সব স্থানেই শিশু নির্যাতন ঘটে।

৩) শ্রুতিকথা- যারা শিশু যৌন নির্যাতনকারি তাদের বেশিরভাগই ছোটবেলায় নিজেরাই ছিল যৌন নির্যাতনের শিকার।
মিথ্যা- গবেষণালব্ধ সত্যটি হচ্ছে, শতকরা মাত্র ২০-৩০ ভাগ নির্যাতনকারী ছেলেবেলায় নিজেরা নির্যাতিত হবার স্বীকারোক্তি দেয়।

৪) শ্রুতিকথা- সমকামীরাই সাধারনত শিশু যৌন নির্যাতনকারি হয়।
মিথ্যা- বেশিরভাগশিশু যৌন নির্যাতনকারি সমকামী নয়, এমন কি নির্যাতিত শিশুটি ছেলে হলেও। এদের মধ্যে অনেকেই স্ত্রী ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকা বিবাহিত পুরুষ !

৫) শ্রুতিকথা- বেশিরভাগ শিশুর কাছেই যৌন নির্যাতনকারি অপরিচিত।
মিথ্যা- প্রায় শতকরা ৮৫ ভাগ ক্ষেত্রেই যৌন নির্যাতনকারি শিশুর পরিচিত হয়……তার আত্মীয়, বন্ধু বা বিশ্বস্ত কেউ।

৬) শ্রুতিকথা- সাধারনত শিশুরা যৌন হয়রানির মিথ্যা অপবাদ দেয়, বড়দের ঝামেলায় ফেলার জন্য।
মিথ্যা- শিশুরা কদাচিৎ যৌন হয়রানির ব্যাপারে মিথ্যা বলে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, শতকরা প্রায় ৯৮ ভাগ ক্ষেত্রেই তারা সত্যি বলে। অভিজ্ঞতায় না থাকলে এত বিসদ বিবরন করাতাদের পক্ষে অসম্ভব।

৭) শ্রুতিকথা- যারা নিজের বাচ্চাদের উত্যক্ত করে তারা অন্নের বাচ্চাদের জন্য বিপদের কারন হতে পারে না।
মিথ্যা- শিশু যৌন নির্যাতন কদাচিৎ একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সাধারারনত যারা নিজের বাচ্চাকে নির্যাতন করে, তারা বাচ্চার বন্ধু বা অন্য বাচ্চাকেও নির্যাতন করতে পারে।

৮) শ্রুতিকথা- শিশু নিজেই যৌন কার্যকলাপে উদ্দীপ্ত করতে পারে।
মিথ্যা- বড়দের যৌন নির্যাতনের দায় শিশুদের উপর চাপানো যায় না। বড়দের তুলনায় শিশুরা নাজুক পরিস্থিতিতে থাকে। তাদের থাকে বড়দের উপর গভীর বিশ্বাস আর আস্থা।

৯) শ্রুতিকথা- শিশু তার উপর যৌন নির্যাতন স্বীকার না করা মানে এই যে, বাবা মা বা অভিভাবকের সাথে তার সম্পর্ক ভাল না।
মিথ্যা- যৌন নির্যাতনকে প্রায়ই ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয় কারন শিশুর জন্য সবচে কঠিন হচ্ছে এটা কাউকে বলা।

১০) শ্রুতিকথা- একবার নির্যাতিত হবার কথা স্বীকার করে পরবর্তীতে স্বীকার না করা মানে, শিশুটি মিথ্যা বলছে।
মিথ্যা- শিশুরা তাদের উপর থাকা বিভিন্ন চাপ থেকে মুক্ত হতে নিজের করা অভিযোগ প্রত্যাহার করতে পারে। হয়ত পরিবার ভাঙ্গনের সম্মুখীন, মা বাবা দুর্দশাগ্রস্থ এবং শিশুটি অসহায়। বাচ্চাটি হয়ত ভাবছে এখন মিথ্যা বললেই সব ঠিক হয়ে যাবে। যাইহোক, এতে করে অপরাধী থামবে তো নাই, বরং আরওভয়ংকর রূপ ধারন করবে এটা জানতে পারলে যে শিশুটিকে কেউ বিশ্বাস করছে না !

১১) শ্রুতিকথা- মহিলারা শিশু যৌন নির্যাতনকারি হতে পারে না।
মিথ্যা- পুরুষের তুলনায় কম হলেও মহিলারা শিশু যৌন নির্যাতনকারি হতে পারে।

১২) শ্রুতিকথা- অপরাধী মানসিক রোগগ্রস্থ।
মিথ্যা- অপরাধীর কোন নির্দিষ্ট মানসিক পরিলেখ (psychological profile)থাকে না।

১৩) শ্রুতিকথা- চোখের সামনে না থাকলে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখা সম্ভব নয়।
মিথ্যা- যদিও ছোট বাচ্চাদের দায়িত্ব নয় নিজেদের রক্ষা করা, তবুও নিজেকে নিরাপদ রাখার কৌশল শিক্ষা দিলে তা তাদের অনেক কাজে লাগতে পারে।

১৪) শ্রুতিকথা- যৌন নির্যাতনকারী দেখতে নোংরা অথবা ভয়ংকর হয়ে থাকে।
মিথ্যা- যৌন নির্যাতনকারী দেখতে অন্যদেরচে কোন দিকেই আলাদা না। তারা আমাদের সমাজেরই অংশ।বরং তারা সচেষ্ট থাকে বড়দের বিশ্বাস আর শ্রদ্ধা অর্জনে। তারা বাচ্চাদের সাথেও ভাল সম্পর্ক গড়ে তোলে তাদের বিশ্বস্ত হয়ে কাছে পৌছার জন্য।

১৫) শ্রুতিকথা- যৌন নির্যাতন ঘটছে তা শিশুর কাছের লোকদের অবশ্যই জানার কথা।
মিথ্যা- শিশু যৌন নির্যাতন গোপন রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায় অপরাধী। তাকে সন্দেহ করা থেকে বিরত রাখতে চায় বাচ্চাটির আশেপাশের সবাইকে ।

১৬) শ্রুতিকথা- যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া বাচ্চাটি পরবর্তীতে সর্বদাই ভীত থাকে।
মিথ্যা- যৌন নির্যাতন অবশ্যই আঘাতদায়ক, কিন্তু এটা এমন নয় যে বাচ্চাটির সমস্ত জীবন নষ্ট করে দেয়। প্রয়োজন আমাদের সাহায্য আর সহমর্মিতা।

১৭) শ্রুতিকথা- যৌন নির্যাতন নিয়ে কথা বললে শিশুরা ভীত হয়ে পরবে।
মিথ্যা- নিজেকে নিরাপদ রাখতে যৌন নির্যাতন সম্পর্কে তথ্য জানা শিশুর জন্য জরুরী। ভুল জানা বা না জানা বরং শিশুর জন্য বেশি ক্ষতিকর।
এগুলো আমাদের সমাজে প্রচলিত অজস্র শ্রুতিকথারমধ্যে গুটি কয়েক মাত্র। শোনা কথায় কান না দিয়ে,সত্য কে মানতেই হবে…। এখনই সময়, নিরবতা ভাঙ্গার, রুখে দাঁড়ানোর, স্পষ্ট করে বলার “ আজকের শিশুরাই আগামীর স্বপ্ন”। এমন কোন পরিস্থিতিতে তাদের যেন না পরতে হয় যা টেনে আনে মানসিক বিপর্যয়।

লেখক পরিচিতি:

নাসিম জাহান
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগ বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা।

Email- njahan.bird@gmail.com